বিজ্ঞানীরা নিরন্তন গবেষণা করে চলেন নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায়। কেউ সফল হন,কেউ চেষ্টা করে যান। অনেকে ব্যর্থ হন। অনেকে আবার এতোটাই দুর্ভাগা যে নিজেদের আবিষ্কারই তাদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় নিজেদের মৃত্যুর কারণ।

প্যারাসুটের আবিষ্কারক-

প্রাচীনকালে যখন মানুষের কাছে ওড়ার জন্য বিমান ছিল না তখন তাদের হয়তো পাখিদের ওড়া দেখে আফসোসই হতো। সেই আফসোস বা আক্ষেপ থেকে অনেকেই চেষ্টা করেছেন আকাশে ওড়ার। তবে একাধারে দর্জি, আবিষ্কারক ও প্যারাসুট তৈরির পথিকৃত ফ্র্যাঞ্জ রেইচেল্ট নামের এক ফরাসী ব্যক্তির মনে হয় ইচ্ছাটা একটু বেশিই ছিল। আগে থেকেই ওড়ার নেশায় পেয়ে বসা এই ভদ্রলোক ফরাসী কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অনুরোধ করেন তাকে যেন তার নির্মীত প্যারাসুট কতটকু কার্যকর তা আইফেল টাওয়ার থেকে পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি দেয়া হয়। অনুমতি মিলেও গেল। ১৯১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাতটায় ফ্র্যাঞ্জ তার দুই বন্ধুকে নিয়ে আইফেল টাওয়ারের কাছে এলেন। প্রথমে একটি ডামির সাহায্যে পরীক্ষা চালানো হলে সেটি সফল হয়। ফলে ফ্র্যাঞ্জ নিজেই সিদ্ধান্ত নেন নিজের নির্মীত প্যারাসুট নিয়ে আইফেল টাওয়ার থেকে লাফ দিবেন। বন্ধুরা অনেক অনুরোধ করলেন কিন্তু তিনি শুনলেন না। নিজের তৈরি প্যারাসুট নিয়ে ১৮৭ ফুট উচ্চতা থেকে লাফ দিলেন ফ্র্যাঞ্জ এবং মাটিতে আছড়ে পড়ে সাথে সাথে মারা যান।

বাইসাইকেলে মৃত্যু-

এবার শোনা যাক বোস্টনের সিলভেস্টার এইচ রোপারের কাহিনী। ১৮৬৩ সালে তিনি বানিয়েছিলেন বাষ্পচালিত বাইসাইকেল। ১৮৯৬ সালের জুন মাসের ১ তারিখ নিজের উদ্ভাবিত বাইসাইকেল নিয়ে ঘন্টায় ৪০ মাইল বেগে ছুটে চলছিলেন রোপার। হঠাৎ তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান এবং মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। পড়ে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

প্রিন্টিং প্রেস হলো জীবনঘাতী-

মার্কিন নাগরিক উইলিয়াম বুলক উদ্ভাবন করেছিলেন ‘রোটারি প্রিন্টিং প্রেস” নামে ছাপাযন্ত্র। এর ফলে প্রকাশনা জগতে এক বিরাট পরিবর্তন আসে। ১৮৬৭ সালের ৩ এপ্রিল Philadelphia Public Ledge নামের এক পত্রিকার জন্য তিনি তার যন্ত্রটি বসাতে যান। হঠাৎ করেই কাজের সময় যন্ত্রের ভেতরে তার পা ঢুকে যায়। অপারেশনের মাধ্যমে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া পা কেটে ফেলার সময় ১২ এপ্রিল তিনি মারা যান।

এছাড়াও…

  • ফ্রেড ডুয়েজেনবার্গ তার নিজেরই তৈরি ‘ডুয়েজেনবার্গ’ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।
  • অটো লিলিয়েনথাল নিজের আবিষ্কৃত গ্লাইডে উড়তে গিয়ে মাটিতে পড়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
  • যুদ্ধের জন্য উপযোগী প্রথম দিকের সাবমেরিনগুলোর ডিজাইনার হোরান লাওসন হানলে মারা যান নিজের তৈরি সাবমেরিন ‘সিএসএস হানলে’ডুবির ঘটনায়।

প্রাচীন ইতিহাসেও এরকম ঘটনা কম নেই-


ওয়ান হু নামে ১৬শ শতকের একজন চীনা রাজকর্মচারীর ঘটনা। তার ইচ্ছা ছিল মহাশূন্যে যাবার। তিনি একটি চেয়ারে বসলেন যাতে লাগানো হয়েছিল ৪৭ টি রকেট বা হাওউই। রকেটগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং বলা হয় ওয়ান হু কিংবা তার চেয়ার-কোনটিকেই আর দেখা যায় নি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন