ওয়াইফাই কি?

ওয়াইফাই হচ্ছে এমন একটি টেকনোলজি যার মাধ্যমে যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাথে বিনা তারেই ডাটা এক্সচেঞ্জ করা যাবে, এক্ষেত্রে হাই স্পিড ইন্টারনেট কানেকশনসহ একটি কম্পিউটার থাকা বাঞ্ছনীয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন অথচ Wifi এর নাম শুনেন নি, ব্যবহার করেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। দ্য  Wifi এলিয়েন্স এর মত অনুযায়ী ওয়াইফাই হচ্ছে ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WLan) যা ইন্সটিটিউট অব ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স এর ৮০২.১১ স্ট্যান্ডার্ড এর উপর ভিত্তি করে হয়েছে। বহুল প্রচলিত ওয়াই-ফাই শব্দটি হচ্ছে ইংরেজি WLan (ওয়েভল্যান) এর সমার্থক শব্দ।স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ সহ যেসব প্রযুক্তি পণ্যগুলো ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারে তা কোন নির্দিষ্ট রিসোর্স যা থেকে ওয়্যারলেস ভাবে ডাটা প্রেরণ করা হবে বা গ্রহণ করা হবে তার সাথে সংযুক্ত হতে পারে। সাধারণত ওয়াইফাই ব্যবহার করা হয় ইন্টারনেট কানেকশন শেয়ার করার লক্ষেই।
কম বেশি সবাই ওয়াইফাই এর সাথে পরিচিত। বর্তমান সময়ে বাজারে আসা সব ল্যাপটপেই ওয়াইফাই সুবিধা পাওয়া যাবে, তাছাড়া প্রায় সবগুলো স্মার্টফোনই এখন ওয়াইফাই সমৃদ্ধ। আর আশার কথা হলো অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে খুবই দ্রুত, দেশের সুপার মলগুলোতে, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস সহ নানা জায়গায় এখন ওয়াইফাই সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। চলতে ফিরতে বিনামূল্যে ভালো স্পিডের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্যে ওয়াইফাই সবার কাছেই বেশ জনপ্রিয়।

ওয়াই-ফাই এর ইতিহাসঃ

১৯৯০ সালের পরবর্তী সময়গুলো তারবিহীন তথা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং এর পথচলা শুরু হয়। যদিও এর সূত্রপাত কাল হিসেবে ধরা যায় ১৮০০ এর পরবর্তী সময়গুলোকে। প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী এবং সঙ্গীতশিল্পী স্যার উইলিয়াম হার্শেল (১৭৩৮-১৮২২) ইনফ্রারেড লাইটের (অবলোহিত আলো) অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন যা মানুষ খালি চোখে দেখতে পারেনা। ইনফ্রারেড লাইটের আবিষ্কার পরবর্তীতে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ থিয়োরি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। জেমস ম্যাক্সওয়েল ছিলেন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ থিয়োরির আবিষ্কারক, যদিও তার অধিকাংশ গবেষণা ছিলো মাইকেল ফ্যারাডে আর অ্যাম্পিয়ার এর গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে। পরবর্তীতে হার্টয ম্যাক্সওয়েলের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ থিয়োরির উপর গবেষণা করে প্রমাণ করেন যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ আলোর বেগে চলাচল করতে পারে এবং সেই সাথে তা তথ্যও সাথে নিয়ে যেতে পারে।
অনেকের কাছে হয়তো এমন লাগতে পারে যে কথা বলতে শুরু করেছি ওয়াইফাই নিয়ে অথচ ইনফ্রারেড লাইট, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ থিয়োরি ইত্যাদি নিয়ে হ-য-ব-র-ল কেন পাকাচ্ছি। আসলে ওয়াইফাইয়ের সাথে উপরের বিষয়গুলো যথেষ্ট সংস্পৃষ্টটা আছে। উপরের আবিষ্কারগুলোই ওয়াই-ফাই এর আবিষ্কারের পিছে চমৎকার ভূমিকা রেখেছে। এই আবিষ্কার গুলো যদি সম্ভব না হতো তাহলে হয়তো আমরা বর্তমানে যে ওয়াইফাই সুবিধা পাচ্ছি বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যে সেটা হয়তো পাওয়া হতো না।
উপরের আবিষ্কারগুলো ওয়াইফাই এর আবিষ্কারে ভূমিকা রাখলেও ১৯৮৫ সালে এফ সি সি (ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন) এর একটি সিদ্ধান্ত না হয়ে হলে হয়তো ওয়াইফাই অনাবিষ্কৃতই থেকে যেতো। তারা বিভিন্ন রেডিও বর্ণালী উন্মুক্ত করে দেন। যার ফলশ্রুতিতে ওয়াইফাই এর আবিষ্কার তরান্বিত হয়। প্রথমে যে বিষয় নিয়ে বলা হলো সেগুলোর সাথে ওয়াইফাই এর যে সম্পর্কে সেটা এখন পরিষ্কার করা যাক। সাধারণ ল্যান এ ডাটা ট্রান্সফার করা হয় তারের মাধ্যমে। তো এই ব্যাপারটাকেই আবিষ্কারকরা ভাবলেন ঠিক অন্যভাবে। যেহেতু ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ডাটা সহ চলাচল করতে পারে তাই যে ডাটা তারের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় সেটাকে বিনা তারে প্রেরণ করা গেলে প্রচলিত ধারণাটাই পালটিয়ে যাবে, আর হয়েছেও ঠিক তাই।
১৯৯১ সালে এ টি এন্ড টি কর্পোরেশনের সাথে এন সি আর কর্পোরেশন ৮০২.১১ আবিষ্কার করেন। ৮০২.১১ ই পরবর্তীতে ওয়াইফাই নামে পরিচিত হয়। শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টা সত্যি যে ১৯৯১ সালে আবিষ্কৃত হওয়ার পর ওয়াইফাই কে ওয়াইফাই বলা হতো না। ১৯৯৯ সালের আগস্টে ওয়াইফাই এলিয়েন্স ইন্টারব্র্যান্ড কর্পোরেশন নামে একটা ব্র্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানিকে “আই ত্রিপল ই ৮০২.১১বি ডিরেক্ট সিকোয়েন্স” এর বদলে অন্য কোন সুন্দর আকর্ষণীয় একটা নাম দেয়ার জন্যে ভাড়া করা হয়। তখন আই ত্রিপল ই ৮০২.১১বি ডিরেক্ট সিকোয়েন্স কে ওয়াইফাই নামকরণ করে ইন্টারব্র্যান্ড কর্পোরেশন আর সেই থেকেই ওয়াইফাই নামেই পরিচিত প্রাপ্ত হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন